কনকনে শীতে কাঁপছে সারাদেশ, শীতের সঙ্গে অসময়ের বৃষ্টি যোগ হয়ে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে তা জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ভরদুপুরেও সূর্যের দেখা পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সড়ক ও নৌ চলাচলে বিপদের হাতছানি ডেকে আনছে কুয়াশার চাদর। জানুয়ারি মাসের প্রায় পুরোটাসময় শীতের প্রকোপ থাকার আগাম শঙ্কার কথা জানিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শীত শুধু কষ্টই বয়ে না, ঋতু বদলের এই পর্বে নতুন শাকসবজির সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে এই সময়ে। অবস্থাপন্ন মানুষেরা এইসময়কে বেশ উপভোগ করে থাকেন, বছর শেষে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কিছুটা চাপ কম থাকায় এইসময়ে নগরের জনগণ গ্রামের দিকে বেড়াতে যায়। যা কিনা একটি সামাজিক উৎসবে পরিণত হয় সারাদেশ জুড়ে।

শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাসমান, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে নানা শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীত মৌসুমে শিশু ও বয়স্কদের ঠাÐাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠাÐাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তারা। এই অবস্থায় প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা। সঙ্গে প্রয়োজন দরিদ্র জনগণের সাহায্যে শীতবস্ত্র ও শীতে ভাল থাকার প্রাথমিক পরিচর্চা সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসা।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, দূরপাল্লার যান চলাচলে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কুয়াশা। এছাড়া রাতে শীতের তীব্রতার কারণে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতাও চোখে পড়ে। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘিœত হয়, ঘটে দুর্ঘটনা। এসময় যান চলাচলে সাবধানতা সর্ম্পকে পরিবহন শ্রমিক ও ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে বিশেষ প্রচারণা চালানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

এছাড়া শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানসহ সর্বস্তরের মানুষ এ জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। অনেক সংগঠনই এ সময় পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। এই মানবিক কর্মে যুক্ত হতে পারেন।

শীতের ভোগান্তি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও মানবিকতার উন্মেষে কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে, এই আমাদের প্রত্যাশা।